রাজযোটক: ত্বক পরিচর্যার নানা উপাদান যারা একসঙ্গে বেশি ভালো কাজ করে

Written by Manisha DasguptaJul 27, 2022
রাজযোটক: ত্বক পরিচর্যার নানা উপাদান যারা একসঙ্গে বেশি ভালো কাজ করে

বহুদিন পর্যন্ত ত্বক পরিচর্যার বিষয়টি অবহেলিত ছিল, কিন্তু এখন মানুষ ত্বক পরিচর্যার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। ত্বকের যে কোনও সমস্যার কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান এবং ত্বকের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখাই স্কিনকেয়ারের উদ্দেশ্য। আজকাল ক্রেতারা ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহৃত উপাদানের সুবিধে এবং অসুবিধের ব্যাপারেও ওয়াকিবহাল এবং তাঁরা এখন বুঝেশুনেই সিদ্ধান্ত নেন। তাই আপনিও যদি ত্বক পরিচর্যার ব্যাপারে মনোযোগী হন, তা হলে চোখ বুলিয়ে নিন এই লেখায়। ত্বক পরিচর্যায় অপরিহার্য কিছু উপাদান আর কোন উপাদান কার সঙ্গে মানানসই, তাই নিয়ে রইল যাবতীয় তথ্য।

 

 

রেটিনল+নিয়াসিনামাইড

এএইচএ/বিএইচএ+গ্লিসারিন

ত্বক পরিচর্যায় সবচেয়ে আলোচিত উপাদান হল রেটিনল। ভিটামিন এ-র অভাবে নানারকম ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, রেটিনল তা সমাধান করতে পারে। পরিণত বয়স্ক ত্বক বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের চিকিৎসায় এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়। রেটিনলের ক্ষুদ্র অণুগুলি ত্বকের বাইরের স্তরের (এপিডার্মিস) গভীরে ডার্মিস স্তরে ঢুকে যায় এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালস নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কোলাজেন আর ইলাস্টিনের উৎপাদন বাড়ে, ত্বক টানটান ভরাট দেখায়। ত্বকের ওপরে রেটিনল এক্সফোলিয়েটরের মতো কাজ করে মৃত কোষ তুলে দেয়। আগে কখনও রেটিনল ব্যবহার না করে থাকলে বেছে নিন ডার্মালজিকা রেটিনল ক্লিয়ারিং অয়েল/ Dermalogica Retinol Clearing Oil। এই কোমল ফর্মুলাটি খুবই কার্যকর এবং ত্বক রাখে নরম, মসৃণ। ত্বকের ওপর স্নিগ্ধভাবে কাজ করা এই তেলটিতে রয়েছে আর্গান, রোজহিপ আর গোল্ডেন জোজোবা অয়েল যা ত্বকে এনে দেয় এক অসাধারণ দীপ্তি। 

 

রেটিনলের সঙ্গে জুড়ি বাঁধার অন্যতম কাজের উপাদান হল নিয়াসিনামাইড। এটি ভিটামিন বিথ্রি-র একটি আকার এবং জলে দ্রাব্য ভিটামিন। অ্যান্টি-অ্যাকনে স্কিনকেয়ারের একটি জরুরি উপাদান নিয়াসিনামাইড। এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণও রয়েছে যা রেটিনল ব্যবহার করার সময় আরাম দেয়। রেটিনল ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেরই প্রথম প্রথম ত্বকে টান ধরে, ত্বক শুকনো লাগে বা ত্বকের চামড়া উঠতে শুরু করে। এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে নিয়াসিনামাইড। তা ছাড়া টপিকাল নিয়াসিনামাইড ত্বকের আর্দ্রতার আস্তরণ ফিরে পেতে সাহায্য করে, হাইপারপিগমেন্টেশন আর জ্বালাভাব কমায় এবং কোলাজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। পরিণত বা ব্রণবহুল ত্বকের জন্য এই কম্বিনেশনটি দারুণ কাজের! রেটিনলের সঙ্গে মাখুন সিম্পল বুস্টার সিরাম - 10% নিয়াসিনামাইড/ Simple Booster Serum - 10% Niacinamide, আর পেয়ে যান মসৃণ ত্বক! হালকা এই সিরামটি সহজেই ত্বকে মিশে গিয়ে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রোমছিদ্র সংকুচিত রাখে এবং বয়সের দাগছোপ কমায়।

 

 

ভিটামিন সি+ভিটামিন ই

এএইচএ/বিএইচএ+গ্লিসারিন

উজ্জ্বল, মসৃণ আর স্বাস্থ্যের জৌলুসে ভরা ত্বক পেতে ভিটামিন সি অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান হয়ে উঠেছে। ভিটামিন সি-র পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-এজিং গুণ রয়েছে। ত্বকের পক্ষে এটি খুবই উপকারী। এটি ত্বক উজ্জ্বল করে, আর্দ্রতা জোগায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, কালো দাগছোপ কমায় এবং ত্বকের রং মসৃণ আর সমান করে তোলে। ভিটামিন সি কিনতে হলে সেরা পছন্দ হল ল্যাকমে নাইন টু ফাইভ ভিটামিন সি+ফেসিয়াল সিরাম/ Lakmé 9 to 5 Vitamin C+ Facial Serum। এতে রয়েছে কাকাডু প্লামের নির্যাস যাতে কমলালেবুর তুলনায় 100 গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে।

ভিটামিন ই আর ভিটামিন সি একসঙ্গে মিলে আপনাকে এনে দেবে স্বপ্নের ত্বক। ভিটামিন ই-র পুষ্টিগুণের জন্য এটি সারা পৃথিবীর ত্বক বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাদৃত। তা ছাড়া এটি ত্বকের রোদজনিত ক্ষতি সারিয়ে তুলে ত্বকের ওপর একটি সুরক্ষার আস্তরণ তৈরি করে দেয় যা ইউভি রশ্মিকে ত্বকে বসতে দেয় না। সিরাম লাগানোর পর তাই মেখে নিন পন্ড'স সুপার লাইট জেল অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজার উইথ হ্যালুরনিক অ্যাসিড + ভিটামিন ই/ Pond’s Super Light Gel Oil Free Moisturiser With Hyaluronic Acid + Vitamin E। এই ময়শ্চারাইজারটিতে ভিটামিন ই রয়েছে যা ত্বকে নিমেষে শুষে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। এই ময়শ্চারাইজারটি ত্বক শীতল রাখে, ফলে লাগালেই ত্বকে আরাম অনুভূত হয়। ভিটামিন সি-র সঙ্গে ব্যবহার করলে আপনি পাবেন রোদ থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা আর তার সঙ্গে নরম মসৃণ ত্বক।

 

 

হ্যালুরনিক অ্যাসিড+ভিটামিন সি

এএইচএ/বিএইচএ+গ্লিসারিন

ইন্টারনেট এখন ভেসে যাচ্ছে হ্যালুরনিক অ্যাসিডের প্রশংসায়। ঠিকভাবে লাগালে হ্যালুরনিক অ্যাসিড আপনার ত্বকের ভোল পালটে দিতে পারে/ When done right, hyaluronic acid can do wonders for your skin। এটি একটি তরল পিছল ধরনের উপাদান যা শরীরে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়। হ্যালুরনিক অ্যাসিডের মূল কাজ হল ত্বকে জল ধরে রাখা আর আর্দ্রতা জোগানো। তবে বয়স, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে হ্যালুরনিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে যেতে পারে। ত্বকের ইলাস্টিকভাব ধরে রাখতে তাই টপিকাল হ্যালুরনিক অ্যাসিড, যেমন সিম্পল বুস্টার সিরাম - 3% হ্যালুরনিক অ্যাসিড+বি ফাইভ/ Simple Booster Serum - 3% Hyaluronic Acid + B5-এর ওপর ভরসা রাখুন। এটি তৈরি হয়েছে 0.5% সক্রিয় হ্যালুরনিক অ্যাসিড দিয়ে যা ত্বকের কোষের গভীরে পৌঁছে গিয়ে ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে তোলে। ভিটামিন সি আর হ্যালুরনিক অ্যাসিড পরস্পরের সঙ্গে যায়ও ভালো। দুটি উপাদানই ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে, ক্ষতি মেরামত করে এবং ত্বকে পুষ্টি জুগিয়ে পরস্পরের কাজে সাহায্য করে। দুটি উপাদানেরই হাইড্রেটিং এবং কোলাজেন উৎপাদনের গুণ রয়েছে। হ্যালুরনিক অ্যাসিড হিউমেকট্যান্ট হওয়ার সুবাদে এর ওপর ভিটামিন সি মাখলে ত্বক সর্বোচ্চ উপকারিতা পায়।

হ্যালুরনিক অ্যাসিড সিরাম মাখার পর ল্যাকমে নাইন টু ফাইভ ভিটামিন সি+ডে ক্রিম/ Lakmé 9 To 5 Vitamin C+ Day Cream-এর মতো পুষ্টিদায়ক ময়শ্চারাইজার মেখে নিন। অসাধারণ এই ডে ক্রিমটি দারুণ হালকা, চটচটে নয় এবং ত্বকে জেল্লা এনে দেয়। হ্যালুরনিক অ্যাসিডের ওপর ভালো ময়শ্চারাইজার মেখে নিলে আপনি পাবেন টানটান, মসৃণ ভরাট ত্বক।

 

 

এএইচএ/বিএইচএ+গ্লিসারিন

এএইচএ/বিএইচএ+গ্লিসারিন

এএইচএ আর বিএইচএ বলতে যথাক্রমে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড আর বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বোঝায়। অ্যাসিড শুনে ভয় পাবেন না। বরং এই দুটি উপাদান আপনাকে এনে দিতে পারে নিখুঁত মসৃণ ত্বক। আজকাল বাজারে অসংখ্য এএইচএ বিএইচএ পিলস ভরে গেছে। দুটি অ্যাসিডই স্বতন্ত্রভাবে ভালো, কিন্তু একসঙ্গে এরা সবচেয়ে ভালো কাজ করে। ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে এএইচএ বিএইচএ পিল ত্বকের সবার ওপরের স্তরটি এক্সফোলিয়েট করে মৃত কোষ সাফ করে দেয় এবং কখনও কখনও পুরো ওপরের স্তরটিই তুলে দেয়। ফলে ভেতরের সুস্থ কোষ বাইরে উঠে আসে। এ ব্যাপারে আমাদের পছন্দ হল ডার্মালজিকা ডেইলি মাইক্রোফোলিয়েন্ট এক্সফোলিয়েন্ট/Dermalogica Daily Microfoliant Exfoliant। রাইস ব্র্যান, হোয়াইট টি আর লিউকোরাইস থেকে প্রাপ্ত ফাইটিক অ্যাসিড (এএইচএ) ভরা এই উপাদানটি ত্বকের সমান আর মসৃণ রং ধরে রাখে, সঙ্গে এর কোলোয়ডাল ওটমিল আর অ্যালান্টয়েনের শীতল সংমিশ্রণ ত্বক রাখে শান্ত আর স্নিগ্ধ। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল, এটি রোজ ব্যবহার করা যায়!

তবে এই পিলটি ব্যবহার করার পর আপনার ত্বক রোদের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর থাকে। এই সময় কাজে দেয় এএইচএ বিএইচএ-র গ্লিসারিন। কেমিকাল পিল করার পর ত্বকে ভালোমতো ময়শ্চারাইজার মেখে নেওয়া খুব দরকার। যে সব স্কিনকেয়ার প্রডাক্টে গ্লিসারিন আছে, তা এএইচএ বিএইচএ পিলের পর আপনার ত্বককে সর্বোচ্চ পুষ্টি জোগাবে, কারণ গ্লিসারিনকে সেরা ময়শ্চারাইজারগুলির মধ্যে অন্যতম বলা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের পছন্দ হল ল্যাকমে অ্যাবসলিউট পারফেক্ট র‍্যাডিয়েন্স স্কিন ব্রাইটেনিং ডে ক্রিম/ Lakmé Absolute Perfect Radiance Skin Brightening Day Cream। ত্বক সেনসিটিভ হয়ে পড়লে তেলতেলেভাবহীন ননস্টিকি ফরমুলার এই ক্রিমটি খুব ভালো কাজ করে। এই ক্রিম সব ধরনের ত্বকের উপযোগী এবং ত্বক দিনভর নরম রাখে।

Manisha Dasgupta

Written by

Author at BeBeautiful.
1619 views

Shop This Story

Looking for something else